Skip to main content

ভাসমান সবজি চাষ

বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই জলাবদ্ধপ্রবন। যেখানে সাধারণত কোনো ধরনের ফসল ফলানো যায় না। এমন এলাকার জন্য সবচেয়ে ভাল হল ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ। ভাসমান এ পদ্ধতিকে তারা স্থানীয় ভাষায় বলে ধাপ পদ্ধতি বা বেড় পদ্ধতি। পানিতে ভাসমান বলে ভাসমান পদ্ধতি। আর কচুরিপানা টেপাপানা দিয়ে ধাপে ধাপে এ কাজটি সাজানো হয় বলে ধাপ পদ্ধতিও। দূর থেকে মনে হয় সবুজের জৈব গালিচা। দেখলে তখন মনে হয় অনিন্দ্য সবুজ সুন্দর ভুবন। সেখানে পুরুষ মহিলাদের সম্মিলিত বিনিয়োগে সৃষ্টি হচ্ছে দেশের এক প্রতিশ্রুত ইতিহাস আর সমৃদ্ধির হাতছানি। জোয়ারের পানিতে ভাসছে, আর ভাটায় জেগে উঠা উজানি চরে ভিন্নভাবে জেগে উঠেছে এসব। কৃষক দিনের পর দিন দেখে, শুনে, বুঝে প্রয়োজনে ভাসমান বা কচুরিপানার ধাপ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বর্ষায় এসব এলাকার হাজার হাজার হেক্টর নিচু জমি জলে বন্দি থাকে। জলাবদ্ধতা আর কচুরিপানা অভিশাপ কৌশলের কারণে পরিণত হলো আশীর্বাদে। ধারণা করা হয় পদ্ধতিটি প্রথম বের করেন বরিশাল অঞ্চলে। সেখানেই শুরু হয় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ।

ভাসমান ধাপের উপরে বিভিন্ন রকম সবজির দৌলা দিয়ে মনের মাধুরি দিয়ে সাজায় নান্দনিক ভাসমান বীজতলা। সেসব ভাসমান বীজতলায় কোনোটায় পেঁপে, লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি আবার অন্যগুলো টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বা সাদা শাকের চাষও করেন। এসব ভাসমান বীজতলাগুলো যাতে ভেসে না যায়, সেজন্য তারা শক্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। শুকনো মৌসুমে পানি সরে গেলে সেসব কচুরিপানার ধাপ জমিতে মিশে জৈব পদার্থের অতিরিক্ত জোগান দেয়। জমি হয় উর্বর। শুকনো মৌসুমে এখানকার মানুষরা চাষ করে বোরো ফসল। এত দিন তারা ভাসমান বীজতলায় কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করত না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন। আগে যেখানে সবজির চারাগুলো ছিল কিছুটা লিকলিকে দুর্বল এখন আধুনিক ব্যবস্থা অবলম্বনে আর মানসম্মত বীজ ব্যবহারে শক্ত সবল স্বাস্থ্যবান চারার ফলনে সুফল পাচ্ছেন।

-
উৎসঃ কৃষি বাতায়ন

Comments

Popular posts from this blog

অতন্দ্র জরিপ ১০.১০.১৮

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ধান ক্ষেতে রোগ এবং পোকামাকড় সনাক্তকরণের জন্য অতন্দ্র জরিপ চালানো হয় উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নে। জরিপে উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে কৃষি অফিসের অন্যান্য অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন। 

পরিবেশবান্ধব ইঁদুর দমন ব্যাবস্থাপনা || ডিএই, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ

ইঁদুর জাতীয় প্রাণী সম্পর্কে ধারণা পৃথিবীর সব স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে শতকরা ৪২ ভাগ ইঁদুর জাতীয় প্রাণী। ইঁদুর জাতীয় প্রাণী রোডেন্টসিয়া বর্গের ও মিউরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সারা পৃথিবীতে ২৭০০টির অধিক ইঁদুর জাতীয় প্রজাতি আছে। এ প্রাণীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের দাঁতের বিশেষ গঠন ও তার বিন্যাস। ১৬টি দাঁত থাকে। মাংসাশী ও পেষণ পূর্ব দাঁত নেই। তবে উভয় পাটিতে সামনে একজোড়া করে ছেদন দাঁত যা অত্যন্ত তীক্ষè ও ধারালো বাটালির মতো। ছেদন দাঁত গজানোর পর হতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বাড়ে। কাটাকাটি না করতে পারলে দাঁত বেড়ে চুয়াল দিয়ে বেড় হয়ে যায় এবং ইঁদুরের খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দাঁত ঠিক রাখার জন্য শক্ত জিনিস সর্বদা কাটাকাটি করে থাকে। ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, সজারু ইঁদুর জাতীয় প্রাণী। চিকা ইঁদুর জাতীয় প্রাণী নহে। ইঁদুর সর্বভূক, নিশাচর এবং স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম সফল প্রাণী। এদের উপকারী ও অপকারী উভয় ভূমিকা রয়েছে। তবে ক্ষতিকারক ভূমিকাই বেশি । ইঁদুর দমনের প্রয়োজনীয়তা ১. ইঁদুর মাঠের সব প্রকার খাদ্য শস্যের ক্ষতি করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ইঁদুর ১২ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টনের অধিক খাদ...

কৃষিতে ইঁদুর : সমস্যা ও সমাধান || কৃষি অফিস, চুনারুঘাট

বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনিষ্টকর মেরুদণ্ডী প্রাণী দমন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনিষ্টকর প্রাণীর মধ্যে ইঁদুর মাঠ ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণের  ক্ষেত্রে একটি প্রধান সমস্যা। ইঁদুর গম ফসলে শতকরা ৩-১২ ভাগ, ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ ফসল নষ্ট করে। এরা বছরে ধান ও গমের প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে যার মূল্য আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকার ও বেশি। তাছাড়া ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে, খাবার খেয়ে ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতি বছর খামারপ্রতি প্রায় ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গুদামজাত শস্য ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে। ইঁদুর মাঠের দানাজাতীয়, শাকসবজি, মূল জাতীয়, ফল জাতীয় ফসলের ক্ষতি করে থাকে। আবার গুদামঘরে সংরক্ষিত ফসলেরও  মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে (প্রায় শতকরা ২০ ভাগ)। এরা যে শুধু ফসলেরই ক্ষতি করে তা নয়। বই খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেটে নষ্ট করে। ইঁদুর প্রায় ৩০ প্রকার রোগ ছড়ায়। এছাড়া এরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ নালায় গর্ত করে নষ্ট করে, অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্র...